মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন

উলিপুরে হরিলাল রবিদাস খাবার জোগাতে না পারায় চলে গেছে স্ত্রী-সন্তান

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৭৫ বার পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম : বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ৭:৪৩ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।ষাটোর্ধ্ব হরিলাল রবিদাস মুচির কাজ করেন। তবে গ্রামগঞ্জে আজকাল তেমন কাজ না পাওয়ায় নিদারুণ অভাব-অনটনে দিন কাটছে তার। তিন বেলা খাবার জোগাতে ব্যর্থ হরিলাল। কয়েক মাস ধরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। এ অবস্থায় তাকে ছেড়ে চলে গেছে স্ত্রী ও ছেলে।

সরেজমিন দেখা যায় নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও মেরামত করতে পারছেন না হরিলাল। ঘরের বেড়া চাল সবই জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি ভূমিহীন থাকেন সরকারি জমিতে।

হরিলালের দাবি রোজগারের অভাবে গৃহ আর খাদ্যকষ্টে দিনযাপন করলেও সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কোনও সুবিধা তিনি পাননি। জোটেনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরও। এ অবস্থায় কোনোমতে বেঁচে আছেন তিনি।

হরিলাল রবিদাস কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। ওই ইউনিয়নের হাতিয়া মেলার গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ওয়াপদা বাঁধের পাশে সরকারি জমিতে ঘর তুলে বসবাস করেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে তার গ্রামের নাম বাঁধ উল্লেখ রয়েছে।

সরকারি খাস জায়গার বাসিন্দা হলেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর মেলেনি তার ভাগ্যে। ঘরের চালের একদিক ঢাকা থাকলেও অপরদিক খোলা। ঘরের নেই বেড়া। হরিলালের তিন মেয়ে এক ছেলে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। অভাব সইতে না পেরে স্ত্রী ছেড়ে চলে গেছে। আরেক মেয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় গেছে। কয়েক মাস আগে ছেলেটিও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে জরাজীর্ণ ঘরে কিশোরী মেয়েকে নিয়ে ঝড়-বৃষ্টি ও শীতে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন হরিলাল।

হরিলাল বলেন সারা দিন অনাহারে থাকি শুধু সন্ধ্যাবেলায় খাই। দিনে ৬০-৭০ টাকা আয় হয়। কোনও দিন ২০ টাকাও হয় না। সেদিন পুরাই অনাহারে থাকা লাগে। কয়েক বছর ধরে এই অবস্থা চলছে। এজন্য স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।

আমার কোনও জায়গা-জমি নেই। বাঁধত থাকি। খাবার জোটে না ঘর ঠিক করি কী দিয়া। সরকারি ঘরের জন্য বারবার গেছি দিবার চায় দেয় না। সরকারি ঘরের জন্য আবেদন করেছেন কিনা জানতে চাইলে এসব কথা বলেন হরিলাল।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় হরিলালের একমাত্র সঙ্গী কিশোরী মেয়ে সুমি (১৫)। হতদরিদ্র বাবার এই মেয়ে অভাবের তাড়নায় স্কুলের বারান্দায় পা দিতে পারেনি। সারা দিন হরিলালের আয়ের অর্ধশত টাকায় যে বাজার হয়, তা-ই রাতে রান্না করে সুমি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ওই এক বেলাই চুলায় হাঁড়ি ওঠে তাদের।

সুমি জানায়, বাবা হরিলাল গ্রাম ঘুরে অন্যের জুতা সেলাই করে যা আয় করেন তাতে তাদের তিন বেলা খাবার জোটে না। রাতে অল্প পরিমাণ রান্না করে রাত ও সকালে অল্প পরিমাণ খেতে হয়। দুপুরে না খেয়ে থাকতে হয়। ঘর মেরামতের সামর্থ্য নেই। একমাত্র ভাই কোথায় আছে, কী করে তারও কোনও খোঁজ নেই। কেউ খোঁজও নেয় না।

স্থানীয় বাসিন্দা ও হরিলালের প্রতিবেশী মহির আলী (৮২) বলেন ১৯৮৮ সালের বন্যার পর বাঁধের ওই জায়গায় আশ্রয় নেন হরিলাল। বয়স হয়ে যাওয়ায় এবং কাজের অভাবে এখন আর তেমন আয় করতে পারেন না। অভাব সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে চলে গেছে। কিশোরী মেয়ে নিয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটছে হরিলালের। অসহায় এই বাবা-মেয়ের জন্য সরকারি সহায়তার অনুরোধ জানাই।

স্থানীয় বাসিন্দা সোলেমান আলী (৫৫) বলেন হরিলালসহ এই গ্রামের চার রবিদাস পরিবার বঞ্চনার শিকার। তাদের প্রত্যেকের জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।

উলিপুর পৌর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান সালমান বলেন হরিলাল রবিদাসের বিষয়টি জানার পর তার বাড়ি দেখে এসেছি। নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তার। হরিলালের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায় ওই ইউনিয়নে অনেক প্রকৃত ভূমিহীন সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা চাই, হরিলালের মতো হতদরিদ্ররা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের পাশাপাশি সরকারি অন্যান্য সুবিধা পাক।

উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে উপজেলায় দুই দফায় প্রায় সাড়ে তিনশ পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় দফায় আরও ৭০টি ঘর নির্মাণের কাজ চলমান।

স্থানীয়দের প্রশ্ন হরিলাল রবিদাসের মতো ভূমিহীন ও দুস্থ ব্যক্তি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাননি। তাহলে এসব ঘর পাচ্ছেন কারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার।


এ জাতীয় আরো খবর ....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Translate »
error: Content is protected !!
Translate »
error: Content is protected !!