মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

জলাবদ্ধতা নিরসনে পানিতে দাড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলো ভবদহবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩১৭ বার পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম : সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৭:২৪ অপরাহ্ন

ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবার তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ও দাবি আদায়ের লক্ষে আবারো পথে নেমে এসেছে। সোমবার ওই এলাকার কয়েক উপজেলার হাজার হাজার বানভাসি নারী-পুরুষ জলাবদ্ধ মণিরামপুরের নেহালপুর ইউনিয়নের পাঁচাকড়ি স্কুল মাঠে হাটু ও কোমর পানিতে নেমে মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করেন। এরপর তারা সংকট নিরসনে এক সংবাদ সম্মেলনে ৪দফা দাবী বাস্তবায়নের দাবী জানান। দাবির মধ্যে রয়েছে জরুরীভাবে মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদান, অতিদ্রুত টিআরএম বাস্তবায়ন, আমডাঙ্গার খাল খনন ও হরি, টেকা, মুক্তেশ্বরীসহ অন্যান্য নদী খনন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এবারের টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে জলাবদ্ধতায় যশোরের ভবদহ অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়ে।

যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, তালা, ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার ২৭ বিলের পানি ভবদহ স্লুইসগেট দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু ভবদহ স্লুইচ গেট সংলগ্ন নদীতে পলি জমে তলদেশ উঁচু হওয়ায় বিলের পানি নিস্কাশিত না হওয়ার দরুন ভবদহপাড়ের প্রায় তিনশ’ গ্রামে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

জলাবদ্ধতার শিকার পানিবন্দি মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ওই এলাকার হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি, মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা। এছড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড এর আগে উভচর (এমফিভিয়েন) মেশিন দিয়ে ভবদহ স্লুইচ গেটের সামনে থেকে পলি অপসারনের কাজ করলেও বন্যা কবলিত এলাকায় টাকা অপচয় ছাড়া কোন কাজে আসেনি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। হরি রিভার বেসিন পানি কমিটির সভাপতি আলহাজ্জ এড. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু, স্থানীয় নেহালপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজমুস সা’দত, অভয়নগরের পায়রা ইউপি চেয়ারম্যান ও পানি নিস্কাশন আন্দোলন কমিটির সেক্রেটারী বিঞ্চুপদ দত্ত, বেতনা রিভার বেসিন পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, কপোতাক্ষ রিভার বেসিন পানি কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ময়নুল ইসলাম, পাইকগাছা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মলঙ্গী, যশোর জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান লায়লা খাতুন, সদস্য ফারুক হোসাইন প্রমুখ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পানি নিস্কাশন কমিটির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, ভবদহের এই সমস্যার সমাধান মুলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তা ব্যক্তিরা চাননা। যে কারনে তারা বিভিন্ন সময়ে অবাস্তব প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন। এতে সরকারের শত শত কোটি টাকার অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

তারা বলেন, এ এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাঁচাতে হলে আইডব্লিউএম এর স্টাডির উপর ভিত্তি করে নিকটস্থ বিলে টিআরএম সম্বলীত যে প্রকল্প প্রণীত হয়েছিল যথাশীঘ্র তা শুরু করতে হবে। জরুরী ভিত্তিতে জলাবদ্ধতার তীব্রতা প্রশমনে যে বিকল্প নিস্কাষন পথ হিসেবে আমডাঙ্গা খাল খননের উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।

জলাবদ্ধতা জনিত বন্যা প্রশমন, নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি এবং এর নিকটস্থ বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের জন্য জরুরী ভিত্তিতে হরি, টেকা ও মুক্তেশ্বরী নদী খনন করতে হবে। এছাড়া ভবদহপাড়ের জলাবদ্ধ মানুষ বিশেষ করে শিশুদের মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের পর্যাপ্ত সাহায্য-সহযোগিতা দিতে হবে। সরেজমিনে দেখাযায়, বন্যা দূর্গত মানুষ রাস্তার টোং ঘরে পশুর সাথে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

১৯৬১ সালে ভবদহ অঞ্চলে যশোর জেলার মনিরমাপুর উপজেলার আড়পাতা, বিল কপালিয়া, অভয়নগর উপজেলার দামুখালি, ভবানিপুর, দত্তগাতি, বারান্দি, চুমড়ডাঙ্গা ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাটেঙ্গা, চেঁচুড়ি, বরুণাসহ ২৭ বিলের পানি নিস্কাশনে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে ২৭ বিলের আকাশের বৃষ্টির পানি ভবদহ স্লুইস গেট দিয়ে নিস্কাশিত হয়।

১৯৮৬ সালে স্লুইস গেটে পলি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভবদহ অঞ্চলের কুলটিয়া, মশিয়াহাটি,মহিষদিয়া, পোড়াডাঙ্গা, সুজাতপুর, ডুমুরতলা, হাটগাছা, সুন্দলীসহ কয়েক’শ গ্রামের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে। এবারের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ওই এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।


এ জাতীয় আরো খবর ....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর