শেরপুরের নকলায় এক বৃদ্ধা অসহায় মাকে নির্মম ভাবে মারধর ও একমাত্র সম্বল সামান্য বসতভিটার জমি জবর দখল করে নিজের মাকে ভূমিহীন বানানোর পায়তারা করার প্রতিবাদে শিক্ষক সাংবাদিক এক ছেলের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার বৃদ্ধা মা।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে নকলা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কলাপাড়া এলাকার চেরুর বাজারস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান স্মৃতি সংসদের অফিস কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শিক্ষক সাংবাদিক হারুন অর রশিদের বৃদ্ধা মা হামিদা বেগম (৬০)।
সংবাদ সম্মেলনে বৃদ্ধা হামিদা বেগমের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, তার ছোট ছেলে হিরা মানিক। এসময় হামিদা বেগম ও তার ছেলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য হিরা মানিক বলেন, হামিদা বেগমের সৎ ছেলে তার বড় ভাই কলাপাড়া মেফতাহুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক কথিত সাংবাদিক হারুন অর রশিদ (৫০), তার স্ত্রী রহিমা বেগম (৪৫), ছেলে মামুনুর রশিদ রাসেল (২৫), হারুন অর রশিদের শ্যালক সাইফুল ইসলাম (৪০) শুক্রবার দুপুরের দিকে বৃদ্ধা হামিদা বেগমের ও তার ছোট ছেলের জায়গা জবর দখল করে জোরপূর্বক ঘর উঠাতে গেলে হামিদা বেগম বাধা প্রদান করেন। এতে হারুন সহ অন্যান্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে বৃদ্ধা হামিদা বেগমকে তাদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি ও লোহার পাইপ দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে হত্যার উদ্দেশ্য হারুন অর রশিদের স্ত্রী রহিমা বেগম বৃদ্ধা শাশুড়ির গলা চেপে ধরেন। পরে স্থানীয়রা হামিদা বেগমকে উদ্ধার করে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে হারুনের পরিবারের সদস্যরা এটি নিজেদের বিষয় উল্লেখ করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করলে, লোক লজ্জার ভয়ে স্থানীয়রা সড়ে দাঁড়ায়। পরে জরুরী সেবার জন্য ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে বৃদ্ধা হামিদা বেগমকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে এনে নকলা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হিরা মানিক আরো বলেন, আমার বড় সৎ ভাই হারুন অর রশিদ একজন কথিত সাংবাদিক যিনি এলাকায় অরাজগতা কায়েম করতে তার ছেলে মমিনুর রশিদ ওরফে রাসেলকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেয় এবং বাপ-বেটা মিলে বিভিন্ন অখ্যাত পত্রিকা ও আইপি টিভির লোগো লাগানো টি শার্ট পড়ে এলাকায় ঘুরাঘুরি করে সাংবাদিকতার জাহিরি করেন। তাদের অন্যায়ের কোন বিষয়ে কেউ বাধা দিলে বা যেকোন বিষয়ে তারা থানা পুলিশের ভয় দেখায়। এতে এলাকায় নিরীহ মানুষ সাংবাদিক বাপ-বেটার দাপটের কথা ভেবে তাদের সকল অন্যায় নিরবে সহ্য করে আসছে।
সম্প্রতি এলাকার এক নিরীহ দলিল লেখক সুরুজ্জামান সাংবাদিক হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ৯টি গাছ কেটে নেওয়ার পাশাপাশি জমি দখলের অভিযোগ এনে নকলা থানায় ও নকলা পৌরসভাসহ কয়েকটি জায়গায় অভিযোগ দায়ের করাসহ মানুষের দ্বারেদ্বারে ঘুরেও কোন সুফল পায়নি। কারন হিসেবে জানা গেছে, এলাকাবাসী ও বিচারকরা রায় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরেই আগের অবস্থা বিরাজ করে। এতে এলাকাবাসী ও বিচারকরা অতিষ্ঠ হয়ে হারুনের পরিবারের কৃতকর্মের বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ। তারা বলেন, শিক্ষক হলো জাতির মেরুদন্ড, সমাজের পথ প্রদর্শক। আর তারাই যদি লজ্জা শরম ছাড়া হয়ে যায়, হয় জবর দখলকারী, তখন আর কিছু বলার থাকে না। এমন বেহায়া লোকের বিষয়ে কথা বলতে নিজেদেরই লজ্জা লাগে বলে এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে হিরা মানিক তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
বক্তব্যে আরো বলা হয়, সাংবাদিক হারুন অর রশিদের অর্থ আত্মসাতের কারনে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে প্রায় এক সপ্তাহ কারাভোগ করেছেন। যা বিভিন্ন পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ হয়। এটা নকলাবাসীর জন্য লজ্জাজনক বিষয় বলে তিনি জানান। তাছাড়া হারুন অর রশিদের কর্মস্থল কলাপাড়া মেফতাহুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় তার উপস্থিতি, পাঠদান ও মাদ্রাসার বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন শেষ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়েও তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে বলে উল্লেখ করেন হিরা মানিক।
হিরা মানিক এক পর্যায়ে বলেন, অজ্ঞাত কারনে নকলা থানায় মামলা না নেওয়ায় আমার মা শেরপুর আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং সি.আর ১৮৫/২০২১। এ ঘটনায় বৃদ্ধা হামিদা বেগম ও তার ছোট ছেলে হিরা মানিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে বলা হয়।
শিক্ষক সাংবাদিক হারুনের বৃদ্ধা সৎ মা হামিদা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, হুনছি মজিবরের বেডি শেখ হাসিনা আঙর মত বুড়াগরে শান্তিতে রাখপার লাইগ্যা আইন করছে। যাতে পুলাপানরা বুড়া বাপ-মারে খাবার কাপড় চোপড়সহ সবকিছু কিইন্না দেয়। কিন্তুক আমার পোলা আমারে কিছুই দেয়না, উল্টা আমার একটু জমি আছে, এইডা বেদহল করবার চায়। বেদহল ফিরাবার গেলে আমার মাস্টর পোলা, পোলার বউ ও চেইংটা (অতি হালকা) একটা নাতিন সবাই মিইল্লা আমারে মারে। এটুকু বলার পরেই, সজুড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এর পরে আর কোন কথা বলেতে পারেননি ওই অসহায় বৃদ্ধা মা।
এ সংবাদ সম্মেলন চলাকালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ, এলাকার সর্ব স্তরের জনগন ও বিভিন্ন গনমাধ্যমে কর্মরত স্থানীয় সাংবাদিকগন উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা বলেন, হারুন সাংবাদিকের বৃদ্ধা মাকে নির্মম ভাবে মারধর ও একমাত্র সম্বল সামান্য বসতভিটার জমি জবর দখল করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আমাদের এলাকার মানসম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। একটি মাত্র লোকের কারনে আমাদের এলাকা নিয়ে কেউ কটুক্তি করুক, আমাদেরকে কেউ হেয় করে কথা বলুক, তা কারো কাম্য নয়। তাই আমরা ওই শিক্ষক সাংবাদিকের বৃদ্ধা মাকে বিবস্ত্র করে মারধর ও একমাত্র সম্বল সামান্য বসতভিটার জমি জবর দখল করে নিজের মাকে ভূমিহীন বানানোর পায়তারা করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার কামনা করছি।