জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকেই ধারাবাহিক পারফরম করে যাচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে একাধিক ম্যাচে ত্রাতার ভূমিকা রেখে পেয়েছেন মি. ডিপেনডেবল উপাধি। জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়কের জন্ম বগুড়া শহরের মাটিডালি এলাকায়।
বগুড়া শহরের মাটিডালি এলাকার ব্যবসায়ী ও ক্রীড়ানুরাগী মাহবুব হামিদ তারা ও রহীমা খাতুনের কোলজুড়ে ১৯৮৭ সালের ৯ মে জন্ম নেন মুশফিকুর রহিম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ছোটবেলা থেকেই তিনি লেখাপড়ায় মেধাবী ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেট তাকে খুব টানতো।
পাড়ার ক্লাব মাটিডালি ক্রীড়া চক্রেই তার হাতে খড়ি। পাড়ায় অন্য ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন। খেলায় তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেন। বিকেএসপিতে ভর্তির আগে ২০০০ সাল পর্যন্ত ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের অনুশীলন, ক্লাব পর্যায়ে খেলা আর আড্ডা সবকিছুই ছিল বগুড়ার ‘মাটিডালি ক্রীড়া চক্র’কে ঘিরে। ১৯৯৮ সালে ওই ক্রীড়া চক্রের হয়েই বগুড়া সদরের কৃষ্ণপুর স্কুল মাঠে ঘরোয়া অনুর্ধ-১২ ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়কের। সেদিন তিনি ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হবার গৌরব অর্জন করেন।
ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম হয়ে ওঠার পেছনে এই মাটিডালি ক্রীড়া চক্রের ভূমিকা ছিল অনবদ্য। বাবা মাহবুব হামিদ তারা জানান, ছেলে ক্রিকেটার হবেন তা তিনি কখনও ভাবতে পারেননি। কৃষ্ণপুর স্কুল মাঠের ওই ম্যাচে সে খেলতে গিয়েছিল তা তিনি জানতেন না। পরে জানতে পেরে মাঠে গিয়ে দেখেন খেলা শেষ, তার ছেলে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছিল।
মুশফিকুর রহিম স্বনামধন্য বগুড়া জিলা স্কুলে পড়তেন। ক্রিকেট খেলার প্রতি অনুরাগ দেখে বাবা সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালে ২০০১ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি করে দেন। সেখান থেকে এসএসসি ও এইচএসসি এবং পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ থেকে সাফল্যের সঙ্গে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করেন।
স্কুল জীবন থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক ছিল বলেই বাবাকে রাজি করিয়ে বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পেরেছিলেন মুশফিক। বিকেএসপিতে ভর্তির আগে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট সেক্রেটারি বর্তমানে বগুড়ার প্রথম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট নরেশ মুখার্জী মুশফিকের কোচ ছিলেন। তিনি তাকে অন্যদের সঙ্গে শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম খেলার মাঠে প্রশিক্ষক দিতেন।
মুশফিকের পরের জীবনটা ক্রিকেটে বেড়ে ওঠার গল্পটা বিশাল। তার সামনে চ্যালেঞ্জও ছিলো বিশাল। মুলত উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হয়ে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়াটা কঠিন ছিল। তখন দেশ সেরা উইকেটরক্ষক ছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট। তার জায়গাটা এক সময় করেও নিলেন। অবশ্য সেটিও ব্যাটিংয়ে মুন্সিয়ানার কারণে।
সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ মুশফিক নিজের মেধা ফুটিয়ে তুলে ২০০৫ সালে জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। ওই বছর ইংল্যান্ড সফর করেন। এরপর যতদিন গড়িয়েছে নিজেকে মেলে ধরেছেন মুশফিক। অসংখ্য রেকর্ড গড়েছেন দেশের ক্রিকেটে।
মুশফিকুর রহিমের প্রথম কোচ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক ক্রিকেট সেক্রেটারি স্পেশাল পিপি নরেশ মুখার্জ্জী জানান, মুশফিকুর রহিম ২০০১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন। এর আগে ছয় মাস তার তত্ত্বাবধানে কোচিং করেন। জিলা স্কুল থেকে টিসি না দেওয়ায় তার বিকেএসপিতে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বিকেএসপির চিপ কোচের কাছে লিখিত দেন। পরবর্তীতে অন্য স্কুল থেকে টিসি সংগ্রহ করে বিকেএসপিতে দেওয়া হয়েছিল।
নরেশ মুখার্জ্জী জানান, তিনি বিকেএসপিতে ক্রিকেটের উপর ডিপ্লোমা করেন। তৎকালীন প্রধান কোচ সারোয়ার ইমরানের কাছে থেকে পাওয়া নোটগুলো মুশফিককে দিয়েছিলেন। এসব নোট পড়ে মুশফিক ব্যাটিং, কিপিং ও ফিল্ডিং আয়ত্ব করেন। ক্রিকেটার হওয়ার আগে মুশফিক খুব কষ্ট করেছে। বাইসাইকেলে প্রতিদিন বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাটিডালির বাড়ি থেকে বগুড়া শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামে যেতেন। সেখানে প্রাকটিস করতেন।
নরেশ মুখার্জী আরো জানান, মুশফিককে অনুশীলনের জন্য তিনি প্রথম জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে ব্যবহৃত দুটি কাঠের বল দিয়েছিলেন।
সূত্র: যুগান্তর