মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০২ অপরাহ্ন

রপ্তানী বন্ধ,বাজারে দাম কম বিপর্যস্ত কুষ্টিয়ার পান চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩১০ বার পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানী বন্ধ থাকা ও স্থানীয় বাজারে ভালো দাম না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়া জেলার পান চাষিরা। তাছাড়া মরার ওপর খাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে পানে ব্যাকটেরিয়া জনিত পান পচা রোগের প্রার্দুভাব। একদিকে রোগের কারণে পান পচে যাওয়া এবং অন্যদিকে করোনার কারণে স্থানীয় বাজারে ভালো দাম না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার পান চাষিরা। বাজারে ভালো দাম মিলছে না আবার পান চাষের উপকরণ খৈল ও ওয়াসির দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের পান চাষিরা।
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সপ্তাহে দিন ভাগ করে পানের হাট বসে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া বাজারে সপ্তাহের রবি ও বৃহস্পতিবার বসে সবচেয়ে বড় হাট। কুষ্টিয়া ছাড়াও পাশ^র্তী চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ অন্যান্য জেলার চাষিরাও পুটলি বেঁধে পান নিয়ে এসে এসব হাটে পসরা সাজান। এখানকার হাটে এক-দেড় বছর আগেও পন হিসেবে (৮০ পিচ পানে এক পন) পান গুনে কৃষকের হাতে টাকা গুজে দিয়ে যেতেন দেশের দূর-ধুরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিদেশে রপ্তানি করা এসব পানে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া দেখা দেয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। দেশে করোনার প্রার্দুভাব দেখা দেয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপে বাংলাদেশের পানের বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। একইভাবে করোনার কারণে দেশের অভ্যন্তরেও পানের চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় গত প্রায় এক-দেড় বছর ধরে পানের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পানে ক্ষতিকর সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে সাময়িকভাবে পান রপ্তানির উপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ধাপে ধাপে এই নিষেধাজ্ঞা ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত হয়। এর পর ইইউ পান রপ্তানিতে কতিপয় শর্ত জুড়ে দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হচ্ছে পান সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হতে হবে, উৎপাদন হতে শিপমেন্ট পর্যন্ত উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ), গুড হাইজিন প্র্যাকটিসেস (জিএইপপি), গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস (জিএমপি) অনুসরণ করত হবে, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব হতে সালমোন্যালা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। এর সঙ্গে করোনার প্রার্দুভাব দেখা দেয়ায় এখনো পান রপ্তানি বন্ধই রয়েছে। ভেড়ামারার জুনিয়াদহ এলাকার পান চাষি রহমত আলী বলেন, বাজারে পানের দাম প্রতিনিয়ত কমছে। আগে যেখানে এক পন পান বাজারে প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ২শ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন সেই পান কমতে কমতে ৫০ থেকে ৭০-৮০ টাকায় গিয়ে ঠেঁকেছে। আবার পান চাষের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই উৎপাদন খরচ বড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না। অব্যাহত লোকসানের কারণে চরম হতাশ হয়ে জেলার অনেক পান চাষিই তাদের দীর্ঘদিনের পানের বরজ ভেঙে ফেলছেন। পান চাষিরা বলছেন, আগের মত যদি পান বিদেশে রপ্তানী করা যায় তাহলে তারা হয়তো আবার লাভের মুখ দেখবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বিগত বছরের চেয়ে জেলায় এ বছর পানের আবাদ কিছুটা কমেছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে জেলায় ২ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছিল। আর এ বছর জেলায় ২ হাজার ৫৪ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। কুষ্টিয়ার ৬ টি উপজেলায়ই কম বেশি পান চাষ হয়ে থাকে। তবে সবচেয় বেশি পান উৎপাদন হয় ভেড়ামারা উপজেলায়। এরপর সদর উপজেলায়। এবার ভেড়ামারা উপজেলায় ৭১৮ হেক্টর জমিতে এবং সদর উপজেলায় ৬০৫ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামানিক কুষ্টিয়ার বাজারে বর্তমানে পানের দাম কিছুটা কম এ কথা স্বীকার করে জানান, মান ভালো হওয়ার কারণে রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রামসহ সারা দেশেই কুষ্টিয়া জেলার পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাচামালের বাজার প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। এ কারণে হতাশ হওয়া চলবে না। পান চাষ লাভজনক দাবি করে তিনি কৃষকদের হতাশ না হয়ে চাষ ধরে রাখার আহবান জানান।


এ জাতীয় আরো খবর ....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Translate »
Translate »