শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

রাজবাড়ীতে ‘কালো সোনা’ চাষে কৃষকের মুখে হাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৩২ বার পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০২২, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

রাজবাড়ীর মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা সাদা ফুল। ফুলের মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজ বীজ। কৃষিবিদদের মতে, এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ গুণে ও মানে উৎকৃষ্ট। ফলনও হয় বেশ ভালো। আর তাই জেলার কৃষকরা পেঁয়াজের বীজ চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন।

জানা গেছে, মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা দেশের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজবাড়ী। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ আসে এ জেলা থেকে। পেঁয়াজের পাশাপশি বীজ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এ জেলার। উৎপাদিত বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। দাম বেশি হওয়ায় পেঁয়াজের বীজকে চাষি ও কৃষি অধিদপ্তর ‘কালো সোনা’ বলে নাম দিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে ফরিদপুরি ও তাহেরপুরি জাতের বীজ আবাদ হয়ে থাকে। জেলার পাঁচ উপজেলায় কম-বেশি বীজের আবাদ হয়ে থাকলেও রাজবাড়ী সদর, পাংশা ও কালুখালীতে বেশি আবাদ হয়ে থাকে। জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ১৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৮ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টরে ৫০০ কেজি বীজ হলে এ বছর প্রায় ৯০ মেট্রিক টনেরও বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে।

সরেজমিনে জেলা সদর ও কালুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে দেখা যায়, সাদা ফুলে ফুলে ভরে গেছে খেত। শেষ সময়ে এসে চাষিরা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঝড়, শীলা বৃষ্টি ও কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার পেঁয়াজ বীজ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন চাষিরা।

জেলার সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয় সদর ও কালুখালীতে। বেশি লাভের কারণে পেঁয়াজ ও বীজ ছাড়া অন্য কোনো ফসলে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না এখানকার চাষিরা। এক বিঘা জমিতে বীজ উৎপাদনে খরচ বাদে লক্ষাধিক টাকা লাভ হয় বলে জানা গেছে।

কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের মঈনশাহ চাঁদপুর গ্রামের চাষি আয়নাল ব্যাপারী বলেন, পেঁয়াজের বীজ চাষ করতে এ বছর বিঘা প্রতি বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরি ও চাষাবাদসহ খরচ হয়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমি থেকে দেড় মণ বীজ পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি বীজ মানভেদে ২-৬ হাজার টাকায় বিক্রি হবে।

চাষি হান্নান মোল্লা বলেন, এ বছর আমি হালি পেঁয়াজের পাশাপাশি ৬০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছি।সবমিলে ৬০ শতাংশ জমিতে আমার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শিলা বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ১০০ কেজি বীজ পাব বলে আশা করছি।

সদর উপজেলার চাষি জয়নাল শেখ জানান, আগে যেসব জমিতে ভুট্টা আবাদ করতাম এ বছর সেখানে পেঁয়াজের বীজ আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর এক কেজি পেঁয়াজের বীজ ২ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এ বছর পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আশা করছি, এবারও ভালো দামে বীজ বিক্রি করতে পারব।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম শহীদ নুর আকবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাজবাড়ী জেলা বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। গত বছর ১৭৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছিল। এ বছর তা বেড়ে ১৯৫ হেক্টর হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর হেক্টর প্রতি ৫০০ কেজি ফলন হবে। মানভেদে ২-৫ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে বীজ।

সূত্রঃ ঢাকাপোস্ট


এ জাতীয় আরো খবর ....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Translate »
Translate »