কুষ্টিয়ার কোর্ট রেলস্টেশনের বারান্দাই হয়ে উঠেছে সত্তরোর্ধ্ব খোদেজা বেগম ও তাঁর মেয়ে বাতাসির একমাত্র আশ্রয়। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে মা-মেয়ের দিন কাটছে এখানেই।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরপরই স্বামীবিহীন খোদেজা বেগম জীবিকার খোঁজে রাজবাড়ীর পাংশার বাগদুলি গ্রাম ছেড়ে আসেন কুষ্টিয়ায়। তখন তাঁর কোলে ছিল মাত্র বছরখানেক বয়সী মেয়ে বাতাসি। সেই থেকে কোর্ট স্টেশনের বারান্দাই তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই।
খোদেজা বেগম বয়সের ভারে এখন আর ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। অস্পষ্ট কণ্ঠে তিনি বলেন,যুদ্ধের সময় ফ্যান-পানি খাইয়া বাঁচছি। যুদ্ধ শেষ হইলেই মিয়াডারে (মেয়েকে) নিয়া আইছি কোর্ট স্টেশনে। কামকাজ করতাম, রাতে থাকতাম এই বারান্দায়। এখন তো মরার টাইম হইছে। কিন্তু মিয়াডারে নিয়া চিন্তা-আমি গেলে ওরে দেখবে কে?
মেয়ে বাতাসি স্থানীয়দের কাছে ‘বাতাসি পাগলী’ নামে পরিচিত। ছোটবেলা থেকে স্টেশনের আলো-হাওয়ােই বড় হয়েছেন তিনি। দিনে সাত কাপ চা খাওয়া তাঁর নিত্য অভ্যাস। স্টেশনের ঝাড়ু দেওয়া আর মায়ের ভিক্ষার টাকাতেই চলে তাঁদের সংসার। বাতাসির আক্ষেপ,সেই ছোট কালে আইছি। এখনো ঘর হইল না। ভোটারও না, ভোটও দিই না। কে আমারে ঘর দিবে?
স্টেশনের সর্দার মুকুল বলেন,ছোটবেলা থেকে মা-মেয়েকে দেখে আসছি। ওরা কখনো কারও ক্ষতি করেনি। কিন্তু জীবনে একটা ঘরও জুটল না।
কোর্ট স্টেশনে বই ও পত্রিকা বিক্রেতা কামাল জানান,৩২ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। চোখের সামনেই বড় হতে দেখেছি বাতাসিকে। সমাজের বিত্তবানরা চাইলে ওদের একটু ভালো থাকা সম্ভব।
স্টেশনমাস্টার ইতি আরা বলেন,বাতাসি খুব ভালো মেয়ে। ওর মা-ও শান্ত মানুষ। আমরা চাই সমাজের সামর্থ্যবানরা এগিয়ে আসুক। যেন মা-মেয়ের এই দীর্ঘ কষ্টের জীবনে অন্তত শেষ বয়সে একটু স্বস্তি আসে।