শত বছরের হাজারো মানুষের লুকানো স্বপ্ন গড়াই সেতু প্রস্তাবিত নাম (শহীদ গোলাম কিবরিয়া) সেতু ধিরে-ধিরে আজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সেতু নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের ২৪ ঘন্টা কঠোর পরিশ্রমে তৈরি হচ্ছে স্বপ্নের সেতু।
কুমারখালীবাসীর বহুল প্রত্যাশিত গড়াই সেতু কাজ সম্পন্ন হলে। হাজারো মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট-দুর্ভোগ লাঘব হবে। পাশাপাশি এ উপজেলার সঙ্গে ঝিনাইদহ ও মাগুরাসহ আশেপাশের জেলার যোগাযোগ সহজ হবে এবং দুরত্ব কমে আসবে।
গড়াই নদীর ওপর নির্মিত কুমারখালী সংযোগ সেতুটি শত বছরের স্বপ্নপূরণ হতে যাওয়া সেতুটি ঘিরে উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের হাজারো মানুষের মধ্যে বইতে শুরু করছে আনন্দের জোয়ার।
৫ ইউনিয়নে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাস। বেশির ভাগ মানুষ জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন কুষ্টিয়া- কুমারখালী শহরে যাতায়াত করে। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে ধু ধু বালুতে হেঁটে গড়াই নদ পার হওয়ার কষ্ট-বিড়ম্বনা দীর্ঘদিনের। কয়েক যুগ ধরে এলাকার মানুষ গড়াই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের আন্দোলন করে আসছিল।
জোতমোড়া গ্ৰামের ব্যবসায়ী টুটুল আহমেদ বলেন, বর্ষাকালে নৌকায় এই নদী পার হতে গিয়ে অনেক ছোট খাটো দুর্ঘটনা পড়তে হয় ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সেতুটি ৫ ইউনিয়ন বাসীর কাছে আশীর্বাদস্বরূপ।
কলেজ ছাত্রী রুবানা পারভিন বলেন, কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন নদী পার হয়ে এপারে কুমারখালী, কুষ্টিয়া শহরে পড়তে আসতে হয়। আর এক শিক্ষার্থী কণা বলে, সেতুটি চালু হলে আমাদের সময় ও নগর অর্থসহ সব দিক দিয়েই উপকৃত হবো আমরা।
কৃষক আমজাদ হোসেন জানালেন, আমাদের এলাকায় বেশীরভাগ মানুষই কৃষি কাজে সঙ্গে জড়িত। আমাদের কৃষি পন্য বাজারে আনা নেওয়া করতে খুব কষ্ট হয়। এই সেতু নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের কৃষকরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গড়াই নদীর ওপর নির্মিত কুমারখালী-যদুবয়রা সংযোগ সেতুর নির্মাণ বাস্তবায়নকারী সংস্থা কুষ্টিয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ করছে। ৮৯ কোটি ৯১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৯১ টাকা ব্যায়ে ৬৫০ মিটার দৈঘ্য পিসি গার্ডার সেতুটি ওয়াকওয়েসহ ৯ দশমিক ৮০ মিটার চওড়া করা হবে। এ ছাড়াও সেতুটির দুই পাড়ে মোট ৮০০ মিটার দৈঘ্য এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হবে। নেশনটেক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও রানা বিল্ডার্স যৌথভাবে সেতুটির নির্মাণ কাজ করছে। ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শুরু করেছে।২১ সালের ২৫ অক্টোবর সেতুটির নির্মাণ কাজ সমাপ্তির কথা রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেশনটেক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও রানা বিল্ডার্স যৌথভাবে সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছে। ইতিমধ্যে পাইলিংয়ের সেতুর ৪৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কার্যাদেশ মতে, ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল রহিম বলেন, কুমারখালী দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেতুটি অবশেষে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ সালে সেতুটি কাজের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেতু টি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
সেতুর নির্মাণকারী নেলনটেক কমিউনিকেশন লিঃ এর ইন্জিনিয়ার মোঃ আসিফ আলী, জানান গড়াই সেতুর কাজ দুই বছরের শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু করোনা কালিন সময়ে কাজ বন্ধ ছিল। আবার কাজ শুরু করছি এই পর্যন্ত সেতুর ৪৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রতিদিন ৯০ জন্য শ্রমিক রাত- দিন কাজ করছে।এই কাজ বর্ষা মৌসুমেও চলবে,। নির্ধারিত সময়ের বাইরে ৫/৬ মাস সময় বেশি লাগতে পারে সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে।
যদুবয়রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দিনের চাওয়া এই গড়াই সেতু কাজ সম্পন্ন হতে চলেছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, এই সেতুর নাম শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু করবার জন্য।
কুমারখালী পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান অরুন জানান, শত বছরের স্বপ কুমারখালী শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু আজ দৃশ্যমান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা হাত ধরেই এই সেতুর বাস্তবায়ন হতে চলেছে।
কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ সেতু পরিদর্শনকালে বলেন, কুমারখালী বাসীর দীর্ঘ দিনের চাওয়া এই ব্রীজ । পুরোটাই জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের উপহার দিয়েছেন। এই ব্রীজ কে ঘিরে দুই পারেন মানুষের জন্য অকল্পনীয় যা আমরা এখনি নিরূপণ করা সম্ভব না। তবে দুই পাড়ের মানুষের অর্থনীতি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে এতে করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।