সাভার ট্যানারি কমপ্লেক্স কেন বন্ধ করা হবে না- আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সাভার ট্যানারি কমপ্লেক্স বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করে। এর আলোকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিসিককে এই চিঠি দেওয়া হলো।
জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিসিককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাভার ট্যানারি কমপ্লেক্স কেন বন্ধ করা হবে না- সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বিসিকের চেয়ারম্যানকে ‘অনুরোধ’ করা হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ অনুরোধ জানানো হয়।
গত ২৩ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না করায় জরুরিভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিক কর্তৃক পরিচালিত ট্যানারি কমপ্লেক্স বন্ধ করার সুপারিশ করা হয় ওই বৈঠকে। এ সময় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভবিষ্যতে আইনের ধারা অনুযায়ী কমপ্লেক্সটি পরিচালিত হলে পুনরায় চালু করার বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। বন্ধের আগ পর্যন্ত জরিমানার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশও করে সংসদীয় কমিটি।
কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, চামড়া শিল্পনগরী পরিদর্শন করে সার্বিক অবস্থা দেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। সংসদীয় কমিটিকে মন্ত্রণালয় জানায়, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হয়। অথচ সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ঘনমিটার। অর্থাৎ দৈনিক ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিবেশে মিশছে। গত তিন বছরে এক কোটি ৬৪ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে গেছে।
চামড়া শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত পরিবেশে উন্নীত করতে ২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজে হাত দেয় বিসিক। হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের অনীহা সত্ত্বেও ২০১৭ সালের এপ্রিলে আদালতের নির্দেশে তাদেরকে সেখানে যেতে বাধ্য হতে হয়। শুরুতে কথা ছিল শিল্পনগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ট্যানারিগুলো নিজেরাই ইটিপি স্থাপন করবে। কিন্তু ট্যানারিগুলো তা না করায় শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকল্পের আওতায় সিইটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১০ সালে প্রকল্প সংশোধন করা হয়। তখন প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৫৪৫ কোটি টাকা। এরই মধ্যে শিল্পনগরীর কোনো সুবিধা নিশ্চিত না করে ট্যানারিগুলোকে বারবার স্থানান্তরের সময়সীমা বেঁধে দিতে থাকে শিল্প মন্ত্রণালয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় উচ্চ আদালত হাজারীবাগের কারখানাগুলোর গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দেওয়ার পর ২০১৭ সালের এপ্রিলে কারখানাগুলো একযোগে স্থানান্তরিত হয়।
খবর: যুগান্তর