নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়া জেলায় যতগুলো পর্যটন কেন্দ্র আছে তার মধ্যে সাধক ফকির লালন শাহ এর মাজার অন্যতম। লালন শাহ এর মাজারকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়াবাসী বছরে দুই বার করে থাকেন নানান আয়োজন । করোনা সংক্রমন শুরু হাওয়ার পর থেকে বিগত আড়াই বছরে লালন শাহ এর মৃত্যু বার্ষিকী বা দোল পূর্ণিমার সময়ের লালন মেলা বা লালন স্মরণ উৎসব স্থগিত করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যার ফলে বিপাকে পড়েছেন মাজারের আশেপাশের ব্যাসায়ীরা। বিশেষ করে কুটির শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের অবস্থা ভিষণ খারাপ। হতাশা আর আশা নিরাশার মাঝে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী মার্চ মাসে লালন শাহ এর দোল পূর্ণিমার সময়ের লালন মেলা বা লালন স্মরণ উৎসব। কিন্তু কুষ্টিয়া সহ সমগ্র বাংলাদেশে যেভাবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছে মাজার কেন্দ্রিক প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসায়ী। লালন শাহ এর মাজারের আশে পাশের ব্যবসায়ীরা মূলত প্রতি বছর দুইটা অনুষ্ঠানের সময়ের তিন মাস ব্যবসা করে। সেই আয়ের টাকা দিয়েই চলে হয় সারা বছর । বছরের দুটি অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়াসহ আশে পাশে জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। শুধু আশে পাশের জেলা নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, এমনকি বিদেশী পর্যটকদের আগমনে মুখোরিত হয়ে উঠে লালন শাহ এর মাজার প্রাঙ্গন। এছাড়াও ঐ সময়ে দেশী বিদেশী হাজার হাজার ভক্ত এবং সাধকদের ভালোসায় শিক্ত হয় বাউল স¤্রাট লালন শাহের মাজার। ক্রেতা শূন্য দোকানগুলো দেখলেই বোঝা যায় কুষ্টিয়ার পর্যটন শিল্পের বিপর্যয়। অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় আশেপাশের ব্যবসায়ীরা সহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কুষ্টিয়ার আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা।
কুষ্টিয়ার আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী হোটেল প্রীতম এর পরিচালক আরিফুল এনাম সোহেল জানান, বিশ^ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাউল সম্রাট লালন শাহের অনুষ্ঠানকালীন সময়ে কুষ্টিয়া প্রচুর পরিমানে পর্যটকের আগমন ঘটে। সারা বছর আমরা ব্যবসায় লোকসান গুণে থাকি, যা আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাউল স¤্রাট লালন শাহের অনুষ্ঠানকালীন সময়ে রিকভার করে থাকি। কিন্তু গত আড়াই বছর আমরা খুবই কঠিন সময় পার করছি। হোটেলের স্টাফ এবং কর্মচারীদের বেতন দেওয়াটাই আমাদের জন্য কষ্ট সাধ্য। আমরা ইতিমধ্যে অনেক কর্মচারী এবং কর্মকর্তাকে ছাটাই করতে বাধ্য হয়েছি।
আন্দোলন নবপ্রাণ কারুশিল্পের মালিক পলাশ জানান, করোনার কারণে দুই বছর কোন অনুষ্ঠান নাই, মেলা নাই, কোন ক্রেতা নাই। খুবই করুণ অবস্থায় আমরা দিনযাপন করছি। এই কুটির শিল্প বিলীন হাওয়ার পথে। আমি নিজে মালিক এবং নিজেই কাজ করি, আমার নিজেরই খুব খারাপ অবস্থা, তাহলে কারিগরদের কথা চিন্তা করুন । করোনা কারণে পর্যটক না আসায় আমরা অনেক সমস্যায় আছি।
লালন শাহের মাজারের মূল ফটকে অবস্থিত চরকা-২ কুটির শিল্প দোকান এর কর্মচারী নয়ন হোসেন জানান, করোনাকালীন গত আড়াই বছর আমাদের বেচা-কেনা নেই বললেই চলে। দোকান মালিকদের অবস্থা খুবই খারাপ । যার ফলে তারা কর্মচারীদের বেতন ঠিকমত দিতে পাচ্ছে না। শীতল একতারা ঘর দোকানের মালিক সুরুজ শেখ ১৮ থেকে ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন লালন শাহের মাজারের মূল ফটকে। তিনি জানান, পূর্বের সঞ্চয়গুলো বসে বসে খাচ্ছি। ভরা দোকান শূন্য হয়ে গেছে। বছরে তিন মাস মূলত আমাদের কুটির শিল্পের ব্যবসা, লালন মেলায় আমরা আশায় থাকি। এখানে যারা ব্যবসায়ী আছে, সবাই কম বেশী ব্যাংক এবং এনজিও এর কাছে দেনা আছে। আমরা এখন খাবার জোগাড় করবো নাকি কিস্তি দিবো। কুটির শিল্পের সাথে জড়িত অনেক কারিগর যারা একতারা ও দোতরা তৈরি করতো অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে । সুরুজ শেখ কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কাছে মেলা চালু করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। চরকা কুটির শিল্প দোকান এর সেলস্ম্যান, করোনা কারণে কাস্টমার আসা অনেকটাই কমে গেছে, খুবই খারাপ অবস্থা। মূলত মেলা কেন্দ্র করেই আমাদের ব্যবসা, মেলা কেন্দ্র করেই আমাদের ব্যবসা জমে ওঠে। মেলা না হাওয়ার কারনে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছি।