শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
শিরোনাম
ভোট গ্রহনে অনিয়ন হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাকুরী থাকবে না… নির্বাচন কমিশনার সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত ও বর্ধিত পানির বিল প্রত্যাহারের দাবীতে গণঅবস্থান কর্মসূচী গাবুরা ইউনিয়ন জলবায়ু সহনশীল ফোরামের অর্ধবার্ষিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে আমন মৌসুমে ১১৪৮০ কেজি ধানবীজ ও ৯১৮৪ কেজি সার বিতরণ করেছে লিডার্স ব্যাঙ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাইক্লিং রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা ঝিনাইদহে বর্নাঢ্য আয়োজনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত কুষ্টিয়ায় ভেজাল কসমেটিকস কারখানায় র‍্যাবের অভিযান,দের লক্ষ টাকা জরিমানা হেশেল ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে দুই শিশুর মৃত্যু কুষ্টিয়ায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি

ঘানিতে ভাঙানো তেলে বিদেশফেরত যুবকের ভাগ্য বদল

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২২৪ বার পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২২, ৭:৫৫ অপরাহ্ন

মিজানুর রহমান (৪২)। বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শেরকান্দি গ্রামে। সংসারের অভাব-অনাটন মেটাতে পরিবার-পরিজন ফেলে ২০১১ সালে সুদূর ওমানে পাড়ি জমান। বেছে নেন ওয়েল্ডিং’র কাজ।

শুরু হয় দিন-রাত হাড় ভাঙ্গা খাঁটুনি খেটে ভাগ্য বদলের চেষ্টা। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা খুব বেশি দিন তার সহায় হয়নি। একদিন ওয়েল্ডিং’র কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে তার দুই পায়েরই গোড়ালি ভেঙে যায়। কাজ করার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ায় তাকে এক প্রকার খালি হাতেই দেশে ফিরে আসতে হয়।

২০১৯ সালে দেশে ফিরে এসে স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং বৃদ্ধ মা সব মিলিয়ে ৬ সদস্যের সংসার কীভাবে চালাবেন এ নিয়ে মহা দুঃশ্চিন্তায় পড়েন। অনেক চিন্তা-ভাবনার পর শেষ পর্যন্ত বাড়ির সাথে রাস্তার ধারে ছোট্ট একটুখানি জায়গা টিন দিয়ে ঘিরে সেখানে গড়ে তোলেন হালের বলদ দিয়ে কাঠের ঘানিতে খাঁটি সরিষা ভাঙানোর ব্যবসা। নিজের নামে প্রতিষ্ঠানের নাম দেন মিজান এন্টারপ্রাইজ। ঘাড়ে ঘানি আর চোখের ওপর মোটা কাপড়ের পর্দা দেওয়া বেঁধে দিয়ে চলছে কলুর বলদ।

কাঠের তৈরি ঘানিটা ঘুরছে আর সরিষা পিষে তা থেকে খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদন হচ্ছে। ধীরে ধীরে টিনের পাত্রে এসে সেই সরিষার তেল জমা হচ্ছে। এভাবে শুরু হয় হালের বলদ দিয়ে বিদেশ ফেরত যুবক মিজানের খাঁটি সরিষার তেল তৈরির ব্যবসা। তেলের ঝাঁজালো গন্ধে যে কারে চোখে পানি এসে যেতে বাধ্য। অন্য কোন কিছু না মেশানের কারণে খুব অল্প দিনের মধ্যেই মিজানের এই কলুর বলদ দিয়ে ভাঙানো খাঁটি সরিষার তেলের কথা উপজেলা ছাড়িয়ে জেলা এমনকি দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
এর পর আর মিজানকে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি কয়েকজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে মিজানের এই ঘানি ভাঙানো কারখানায়।

সূত্র জানায়, কাঠের ঘানির সাহায্যে ফোঁটা ফোঁটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেল এক সময় কুষ্টিয়াসহ সারা দেশের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে বিক্রি হতো। এই তেল বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন কলু সম্প্রদায়। তবে গ্রামবাংলার অতি পরিচিত দৃশ্যটি এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। এখন বৈদ্যুৎ চালিত যন্ত্রেই তেল ভাঙানো হয়ে থাকে। তবে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শেরকান্দি গ্রামের মিজান ঐতিহ্য ও সনাতন পদ্ধতিতে খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদনকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এ খাঁটি সরিষার তেল কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তিনি সরবরাহ করছেন। অনেকে আবার খাঁটি তেলের আশায় ছুটে আসছেন ঘানিতে।

উপজেলার পান্টি ইউনিয়ন থেকে মিজানের কারখানায় তেল কিনতে আসা আজমত আলী জানান, ৯০ দশক পর্যন্ত এই ঘানি ভাঙানো সরিষার তেলই মানুষ ব্যবহার করত। কিন্তু যন্ত্র অবিষ্কারের পর থেকে বলদ দিয়ে ঘানি ভাঙানো সরিষার তেল যেন ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেতে বসেছে।

প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে মিজানের ঘানির কারখানার দরজা খোলা হয়। চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। সব সময় মিজানের এই ঘানি কারখানায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় যেন লেগেই থাকে। কারখানায় বসেই কথা হয় মিজানের সাথে। মিজান জানান, দেশে ফিরে এসে সামান্য টাকা আর হালের দুইটি বলদ দিয়ে শুরু করেন বলদ দিয়ে সরিষার তেল ভাঙানো ব্যবসা। এখন নিজের সংসারের হাল ধরতে পেরেছেন। প্রথমে দুইটি বলদ গরু দিয়ে শুরু হলেও তেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে তিনি পাঁচটি বলদ ব্যবহার করেন এই ঘানি ভাঙার কাজে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন


এ জাতীয় আরো খবর ....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Translate »
error: Content is protected !!
Translate »
error: Content is protected !!