বামুনডাঙার হাঁড়িদোয়া বিলের ধারে পাটকাঠির বেড়া টিনের একটি মাত্র ঘরে বসবাস একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের। তিন ভাই আর মা-বাবার সাথে বাড়ির এক কোনে থাকে আরও দুটি গরু আর দুটি ছাগল। বর্গাচাষি বাবলু বিশ্বাসের তিন ছেলের ছোটোটি চার বছরের শিশু, মেজোটি স্কুল পড়ুয়া আর সবার বড় ছেলেটির পড়ালেখা অনার্সে। অভাবের সংসারে মাঝেমধ্যে আনন্দের দোলা দেয় বড় ছেলে বিজয়ের গলায় কখনও আব্দুল আলীমের গান, কখনও বিচ্ছেদ-লালনগীতি। বাবার পছন্দেই সাধারণত বাড়িতে বসে এসব গানের আসর। নিজেও সুর মেলান কখনও কখনও। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের তরুণ কণ্ঠশিল্পী বিজয় আলী কাজলের গল্পই আজ তুলে ধরার চেষ্টা বর্ণমালায়।
এই তরুণ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিচ্ছে উপজেলার অন্যতম সঙ্গীত গুরু সরকার আমি ইসলামের কাছে। অসাধারণ দাপটের সাথে সুর তোলে হারমানিয়মা, কীবোর্ড, তবলা,ঢোল,অক্টোপ্যাড আর দোতারায়। অর্জনের তালিকায় মাত্র ২২ বছর বয়সেই যোগ করেছে জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পুরষ্কার। বিজয় গেল ৬ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনির হাত থেকে পেয়েছে দেশের রোভার স্কাউট সদস্যদের মধ্যে একক সঙ্গীতে দেশ সেরার পুরষ্কার।
দৌলতপুর কলেজে বাংলা বিভাগের এই শিক্ষার্থীর পড়ালেখার খরচ চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে। পাঁচ সদস্যের পরিবারে দৈনিক খাবারের জোগাড় হয় নিজেদের ছোট্ট কৃষি কাজ থেকে। অর্থনৈতিকভাবে নাজুক পরিবারে থেকে ভাইয়েদের পড়ালেখার পাশাপাশি সঙ্গীত আর কৃষিকাজ চালিয়ে যাওয়া বিজয়ের দিনপাত যেন নাভিশ্বাস।
এলাকার গানের মঞ্চে বিজয় যেন অভিন্ন এক নাম। করোনার ঘরবন্দী সময়ে অনলাইন দুনিয়ায় বিজয়ের গান টেনেছে মানুষকে। টেলিভিশনের পর্দায়ও সুযোগ হয়েছে কয়েকবার। সোমবার এক সাক্ষাৎকারে বিজয় বলে, গানের চর্চা চালানো আমার জন্য খুবই কঠিন। শুভাকাঙ্ক্ষী, হৃদয়বান, দায়িত্বশীলদের সহযোগিতা ছাড়া প্রায় অসম্ভব। গান নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি।
বিজয়ের বাবা বাবলু বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলে একদিন বড় গায়ক হবে। সংসারের পরিস্থিতি তা বাস্তবায়ন করতে দিবে কি-না জানিনা। শোবার জায়গাই যে পরিবারে নেই তার জন্য সঙ্গীতের চর্চায় সময় দেয়া কতটা কঠিন সেটা আমরাই বুঝি।
এলাকাবাসী মনে করছেন, নিরাপদ আশ্রয়স্থল আর আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে বিজয়ের পরিবারের পাশে দাঁড়ালে প্রতিভা বিকাশ ও কার্যকরে সুবিধা হবে।
সর্বোপরি সকলের দোয়া চেয়েছেন তরুণ প্রতিভাবান শিল্পী বিজয় আলী কাজল। পছন্দের শিল্পীদের তালিকায় আছেন এন্ড্রু কিশোর, সুবীর নন্দী, সৈয়দ আব্দুল হাদী, বারী সিদ্দিকী রথীন্দ্রনাথ রায়ের মতো কিংবদন্তী শিল্পীরা। ওপার বাংলায় বিজয়ের মুগ্ধতা মান্না দে। গাইতে পছন্দ, গজল, লোক সংগীত, আধুনিক, নজরুল আর রবীন্দ্রনাথের গান। ক্লাসিকে ঝোঁক থাকলেও শ্রোতাদের চাহিদাতে বিজয়ের বেশিরভাগ গাওয়া হয় শাস্ত্রীয় আর আধুনিক গান।